ইউনিলিভার

ইউনিলিভার কি আসলেই ইসরাইলী কোম্পানি ? এর পণ্যগুলি বয়কট করলে ইসরাইলের ক্ষতি কিংবা ফিলিস্তিনের মাজলুম মুসলমানদের কোন ফায়দা আছে?
*আসলেই কি ইউনিলিভার ইসরাইলী কোম্পানি?
*এর পণ্যগুলি বয়কট করলে ইসরাইলের ক্ষতি কিংবা ফিলিস্তিনের মাজলুম মুসলমানদের কোন ফায়দা আছে?
এই দুটি প্রশ্নের উত্তর নিয়েই আজকে আমাদের আলোচনা।
গবেষণার সারাংসঃ
এই কোম্পানিটি আসলে ইসরাইলী বা জায়নবাদি কোন কোম্পানি নয়। একে বয়কট করার উপযুক্ত তো নয়ই বরং ক্ষেত্র বিষেশ তা বাহবা পাবার যোগ্য। কারণ, তারা ইসরাইলে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করার মাধ্যমে একরকম জায়নবাদিদের মুখে চুন কালি মেখে দিয়েছে। তাই গুজব, বিভ্রান্তি, অপপ্রচার, চালিয়ে অযথা মানুষকে বিপদে না ফেলি। এবং এমন কোম্পানিগুলোকেই বয়কট করি এবং বয়কটের আহবান জানাই যাতে বাস্তবেই ইসরাইলের ক্ষতি ও আমাদের মাজলুম ভাইদের উপকার রয়েছে। এমন কোম্পানিগুলোকে নয় যাতে কোন ফায়দা নেই বরং জায়নবাদের বিরুদ্ধবাদিদের ক্ষতি রয়েছে।
ইউনিলিভার
প্রতিবারই ইসরাইল-ফিলিস্তিনের যুদ্ধ শুরু হলে বয়কট তালিকার প্রথম সাড়িতে থাকে ইউনিলিভার।কোম্পানিগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা্র শুরুতে আমরা ইউনিলিভারকে দিয়ে শুরু করছি।ইউনিলিভার একটি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি। ইউনিলিভারের পণ্যগুলো আমাদের জীবনের সাথে মিলে গেছে খুব ঘনিষ্ঠভাবে। তাই ইসরাইল-ফিলিস্তিনের ইস্যু সামনে আসলে এর পণ্যগুলো বয়কট করা খুবিই কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দোস্ত-আহবাবরা ইউনিলিভারের কোন পণ্য হাতে দেখলে বলে উঠে তুই এখনো ইসরাইলী পণ্যে ব্যবহার করা ছাড়তে পারলিনা? এই বুঝি ফিলিস্তিনের মুসলমানদের জন্য তোর ভালোবাসা?। এরকম নানান সময়ে বিভিন্ন রকমের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির স্বীকার আমাদেরকে হতে হয়। আমাদের মধ্যে পণ্য বয়কটের বিষয়ে অপ্রচার, বিভ্রান্তি, মিথ্যা তথ্যের ছড়াছড়ি, বাড়াবাড়ি-ছাড়াছাড়ি, ইত্যাদি অনেক বিষয় রয়েছে। ফেসবুকার এবং-ইউটিউবাররা মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে এই বিষিয়ে বিভিন্ন রকমের বিভ্রান্তি মূলক ভিডিও অনলাইনে আপলোড দিয়ে টাকা ইঙ্কামক করছে।কিন্তু এই কোম্পানিটি আসলেই ইসরাইলী কিনা? ইসরাইল কর্তৃক ফিসিস্তি্নের ভূমি দখল ,বোমা হামলা এবং জুলুম-নির্যাতনের সাথে আদৌ এর সহযোগিতা,সমর্থন, কিংবা অন্য কোন ধরণের সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা? সে খবর নাই কারোরই ।এই বিষয়গুলকে সামনে রেখেই “ইউনিলিভার”কে নিয়ে আজকের আলোচনা। এটা কি আসলেই ইসরাইলি বা জায়নবাদি কোন কোম্পানি? এবং এর পণ্যগুলোকে কি আমাদের বয়কট করা উচিত? পুরো আলোচনা জুড়ে আমরা এই দুটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
কথা না বাড়িয়ে আমরা মূল আলোচনায় চলে যাই। প্রথমে আমরা উইকিপিডিয়া থেকে ইউনিলিভারের সংক্ষিপ্ত পরিচয় জেনে নেই তাহলে আমাদের প্রথম প্রশ্নের উত্তরটা জানা হয়ে যাবে।
ইউনিলিভার একটি ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী বহুজাতিক কোম্পানি যার হেডকোয়ারটার রটার্ডাম, নেদারল্যান্ডস। এই প্রতিষ্ঠানের পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে খাদ্য ও পানীয়, পরিষ্কারক পণ্য ও প্রসধনী সামগ্রী। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এটি ইউরোপের সবচেয়ে পুরনো দামী কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৭ম।
সদর দপ্তর: লন্ডন, যুক্তরাজ্য সিইও: হেইন শুমাখার (১ জুল, ২০২৩–), মূল সংস্থা: Unilever plc, প্রতিষ্ঠাতা: অ্যান্টোনিয়াস জোহানেস জার্জেন্স, স্যামুয়েল ভ্যান ডেন বার্গ, জর্জ শিচট, প্রতিষ্ঠার তারিখ ও জায়গা: ২ সেপ্টেম্বর, ১৯২৯, যুক্তরাজ্য। (উইকিপিডিয়া) এই তথ্যের মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত হলাম যে এটি যুক্তরাজ্য ভিত্তিক একটি বহুজাতিক কোম্পানি।
এখন কথা হল ইউনিলিভার বাংলাদেশের মালিক কারা?
ইউকেপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী এটা বাংলাদেশ সরকার এবং ইউনিলিভারের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হয়ে থাকে।প্রতিষ্ঠানটিতে ইউনিলিভারের শেয়ার ৬০.৪% এবং বাংলাদেশ সরকারের শেয়ার ৩৯.৬%। এটা পূর্বে লিভার ব্রাদার্স বাংলাদেশ লিমিটেড নামে পরিচিত ছিল। ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে এটির নাম পরিবর্তন করা হয়।বাংলাদেশে বহুল বিক্রিত কিছু পণ্য।
এখন দ্বিতীয় যে বিষয়ে আমাদেরকে তথ্য নিশ্চিত করতে হবে তা হল, এই কোম্পানি কি ”জয়নবাদ” কে( জায়নবাদি বলতে ইস্রায়েল রাষ্ট্র বা ফিলিস্তিন অঞ্চলকে কেন্দ্র করে একটি ইহুদি রাষ্ট্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও পৃষ্ঠপোষকতাকে সমর্থন কারী ইয়াহুদি বা অ-ইহুদি সকল ব্যক্তিকে বোঝায়।) সাপোর্টকারী কোন কোম্পানি কিনা? যারা কোন না কোনভাবে ইসরাইলের এই নির্বিচার অমানবিক কার্যক্রমের সাথে জড়িত রয়েছে। এই প্রশ্নের উত্তর জানার আগে কিছু তথ্য আমাদের জানা থাকা দরকার।
বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের মতো ইউনিলিভার 1978 সালে প্রতিষ্ঠিত Ben & Jerry's নামক ইসরাইলী আইসক্রিম কোম্পানিটিকে ক্রয় করার মাধ্যমে ইজরাইলে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছিল। কিন্তু ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইজরাইলের দখলদারিত্ব কে তারা তাদের প্রাতিষ্ঠানিক আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক মনে করত। এক পর্যায়ে তারা তারা তারা দখলদারিত্বের কারণে ইসরাইলকে ব্যবসায়ীক ভাবে বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয় এবং তারা পশ্চিম তীর এবং ইসরাইলে Ben & Jerry's এর আইসক্রিম বিক্রয় বন্ধের ঘোষণা দেয়। এতে ইসরাইল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবার অভিযোগে ইউনিলিভারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের করে। এবং আবারো ইসরাইলে তাদের ব্যবসায়ীক কার্যক্রম পরিচালনার দাবি করে। কিন্তু এই মামলায় ইসরাইল পন্থিরা হেরে যায়। অবশেষে ইসরাইলের অনুরোধে সেই কোম্পানি তাদের কাছে বিক্রয় করে দিয়ে সেখান থেকে তারা বিদায় নিয়ে নেয়।বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পত্রিকা বড় ছোট অনেক রিপোর্টও করেছে। আমরা তার চুম্বক অংশ তথ্যের নিশ্চয়তার জন্য তুলে ধরছি।
ছয় জুলাই ২০২২ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাযিরা ইংরেজির সংবাদ শিরনাম ছিল
Unilever decision spotlights crackdown on US Palestinian activism
ইউনিলিভা্রের সিদ্ধান্ত মার্কিনিদের ফিলিস্তিন বিষয়ে কর্মতৎপরতার উপর (দৃষ্টি আকর্ষণমূলক) কঠোর ব্যবস্থা
প্রতিবেদনে তারা দাবিকরেছে যে,
The ice cream brand had announced in July last year that it would n o longer sell its products in areas within an “internationally recognised illegal occupation” – a decision that drew scorn from Israel and prompted a campaign to pressure Unilever to roll back the decision. Israel’s supporters cheered Unilever’s announcement last Tuesday to sell to an Israeli licensee.
"আইসক্রিম ব্র্যান্ডটি গত বছরের জুলাই মাসে ঘোষণা করেছিল যে এটি "আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অবৈধ দখলের" এলাকায় তাদের পণ্য বিক্রি করবে না -এটি এমন একটি সিদ্ধান্ত যাকে ইসরায়েলের কাছ থেকে তিরস্কার করা হয়েছে এবং ইউনিলিভারকে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দিতে তার বিরুদ্ধে একটি প্রচারণায় সমর্থন যোগিয়েছে ।"
বার্তা সংস্থা রয়টার্স ৩০ শে আগষ্ট ২০২৩ খবর করেছে যে
Founded in 1978, Ben & Jerry's has long positioned itself as socially conscious. It said in July 2021 that selling ice cream in the occupied Palestinian territories was "inconsistent with our values." Most countries consider Israeli settlements in those territories illegal, which Israel disputes. In 2022, Unilever sold its interest in Ben & Jerry's operations in Israel. Unilever retained authority over financial and operational decisions when it bought the ice cream company in 2000.
1978 সালে প্রতিষ্ঠিত, Ben & Jerry's দীর্ঘকাল ধরে যা নিজেকে সামাজিকভাবে সচেতন করে রেখেছে। এটি 2021 সালের জুলাইয়ে বলেছিল যে অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে আইসক্রিম বিক্রি করা "আমাদের মূল্যবোধের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।"বেশিরভাগ দেশ ঐসব অঞ্চলে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকে অবৈধ বলে মনে করে, । 2022 সালে, ইউনিলিভার ইস্রায়েলে বেন অ্যান্ড জেরির কার্যক্রমে তার আগ্রহ বিক্রি করে। ইউনিলিভার 2000 সালে আইসক্রিম কোম্পানিটি কেনার সময় আর্থিক এবং অপারেশনাল সিদ্ধান্তের উপর কর্তৃত্ব বজায় রাখে। (তাই তারাইসরাইলকে বয়কটের আওতায় আনতে কারো কাছে দায়বদ্ধ ছিল না)
আল-জাযিরা আরবী ২৯ আগষ্ট ২০২৩ প্রতিবেদন করেছে যে, সংবাদটির শিরনাম ছিল,
يونيليفر تنجو من دعوى قضائية بعد قرار منع بيع المثلجات في الأراضي الفلسطينية
"ফিলিস্তিনি অঞ্চলে আইসক্রিম বিক্রি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের পরে ইউনিলিভার একটি মামলা থেকে রক্ষা পেয়েছে"। তারপর প্রতিবেদনে লিখেছে
وحكمت القاضية لورنا سكوفيلد اليوم الثلاثاء بأن شركة يونيليفر لم تكن ملزمة بالكشف عن وقف بيع المثلجات
عندما قرر مجلس إدارة شركة (بن آند جيريز) ذلك في عام 2020.
ولم يرد المحامي الذي يمثل صندوق المعاشات ولا المتحدث باسم شركة يونيليفر حتى الآن على طلبات للتعليق.
واتهمت بعض الجماعات اليهودية شركة (بن آند جيريز)، التي تأسست عام 1978 وتصف نفسها بأنها تراعي الأبعاد الاجتماعية، بمعاداة السامية.
وقالت الشركة في يوليو/ تموز 2021 إن بيع المثلجات في الأراضي الفلسطينية المحتلة “يتعارض مع قيمنا”.
وترى معظم الدول أن المستوطنات الإسرائيلية الموجودة في الأراضي الفلسطينية غير قانونية.
বিচারক লর্না স্কোফিল্ড মঙ্গলবার রায় দিয়েছেন যে ইউনিলিভার আইসক্রিম বিক্রি বন্ধ করার বিষয়টি প্রকাশ করতে বাধ্য নয়। যার বিষয়ে বেন অ্যান্ড জেরির পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক 2020 সালে এটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।পেনশন তহবিলের প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবী বা ইউনিলিভারের মুখপাত্র কেউই মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেননি।
কিছু ইহুদি গোষ্ঠী বেন অ্যান্ড জেরিসকে অভিযুক্ত করেছে, যেটি 1978 সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং নিজেকে সামাজিকভাবে সংবেদনশীল, ইহুদি বিরোধীতার জন্য বর্ণনা করে। কোম্পানিটি 2021 সালের জুলাইয়ে বলেছিল যে অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে আইসক্রিম বিক্রি করা "আমাদের মূল্যবোধের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।" বেশিরভাগ দেশ বিশ্বাস করে যে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বসতি অবৈধ।
সংবাদ মাধ্যম এপি নিউজ করেছে,
The Ben & Jerry’s announcement is one of the strongest steps by a well-known company against Israel’s settlements, which are widely seen by the international community as illegal. The Israeli government has condemned the decision, accusing the company of joining a Palestinian-led boycott campaign against Israel.
দ্য বেন & জেরির ঘোষণাটি ইসরায়েলের বসতি স্থাপনের বিরুদ্ধে একটি সুপরিচিত কোম্পানির সবচেয়ে শক্তিশালী পদক্ষেপগুলির মধ্যে একটি, যা ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অবৈধ হিসাবে দেখে। ইসরায়েল সরকার এই সিদ্ধান্তের নিন্দা করেছে, কোম্পানিটিকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের নেতৃত্বে বয়কট অভিযানে যোগ দেওয়ার অভিযোগ এনেছে।
এই ছিল কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সংবাদ
কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা সারা বিশ্বব্যাপী ইসরাইলী কিংবাদে জয়নবাদকে সমর্থন কারী কোম্পানিগুলর বিরুদ্ধে সফল বয়ক আন্দোলন করে আসছে। এর মধ্যে সবার শীর্ষে হল বি ডি এস(BDS এর আলোচনা আমারা ) ইসরাইল প্রতি বছর এর বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য বিরাট অংকের টাকা বরাদ্দ দিয়ে থাকে।২০২২ সালে যে টাকার পরিমাণ ছিল প্রায় ২৬ মিলিয়ন ডলার (এর বিস্তারিত আমারা দ্বিতীয় পর্বে করেছি ) বুঝতেই পারছেন ইসরাইলরে বিরুদ্ধে এই প্রতিষ্ঠানটির বয়কট প্রচারণা কতটা কার্যকর। পুরো পৃথিবীর বিরাট বিরাট কোম্পানিগুলো এর বয়কট প্রচারণার লক্ষ্য বস্তু হয়ে ইসরাইলে তাদের বানিজ্য বন্ধ করে দিতে বা তাদের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে। তাই ইউনিলিভার বয়কট করার আগে আমাদের কর্তব্য হল ইউনিলিভার এই সকল কোন বয়কট প্রচারণা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় আছে কিনা খতিয়ে দেখা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল আমরা অনের খোঁজাখুঁজি করেও তাদের তালিকায় ইউনিলিভারের নাম পাইনি।
উপরোক্ত আলোচনা এবং প্রতিবেদন গুলোর মাধ্যমে কয়েকটি বিষয় আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেলঃ
- uniliver আসলে ইজরাইলি কোন কোম্পানি নয় । এটি একটি সম্পূর্ণ যুক্তরাজ্য(ব্রিটেন) ভিত্তিক পরিচালিত কোম্পানি।
- unilever বেন অ্যান্ড জেরি নামক একটি ইসরাইলি আইসক্রিম কোম্পানিকে ২০০০ সালে ক্রয় করেছিল কিন্তু ইসরাইল কর্তৃক ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড দখল করা অব্যাহত রাখার কারণে ইসরাইলকে তারা কোম্পানির নীতিগত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বয়কট করে।
- ২০২১সালে তারা ইসরাইলে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়। এবং তাদের সরঞ্জাম বিক্রি করে দিয়ে সেখান থেকে বিদায় নিয়ে নেয়।
- ইউনিলিভার নীতিগতভাবে জয়ান বাদীদের বিরুদ্ধে খুবই সোচ্চার যেটা ইয়াহুদিরাও বিশ্বাস করে যেমনটা আমরা আল জাজিরার প্রতিবেদনে দেখেছি।
- ইয়াহুদির বিদ্বেষের অভিযোগে এর বিরুদ্ধে ইজরাইল মামলা করেছিল কিন্তু সেই মামলায় ইউনিলিভার বিজয়ী হয় এবং পরাজিত হয় ইসরাইল।
- আন্তর্জাতিক বয়কট প্রচারণা প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকায় আপাতত ইউনিলিভার কোম্পানির নাম নাই।
- বর্তমানে বাংলাদেশে পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানটিতে ইউনিলিভারের শেয়ার ৬০.৪% এবং বাংলাদেশ সরকারের শেয়ার ৩৯.৬%।
এই বিষষয়গুলো সামনেরেখে আমরা বলতে পারি যে এটা জায়নবাদি কোন কোম্পানি নয়। যদি এমনটাই হতো তাহলে এর বিরুদ্ধে ইসরাইলের এতো অভিযোগ আর মামলার-মুকাদ্দামার দরকার ছিল না।
এর সাথে সাথে আমাদের কাছে আরো একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেল যে ইউনিলিভার কোম্পানির প্রোডাক্টগুলোকে বয়কট করার কোন প্রয়োজন নেই। বরং দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে তাদের এই সাহসী অবস্থানের জন্য তারা বাহবা পাবার যোগ্য।
হ্যাঁ, বুঝতে পেরেছি আপনার মনে এই প্রশ্ন আসতেই পারে যুক্তরাজ্য তো ইসরাইলের সরাসরি সাপোর্টার এতেও তো আমাদের ইউনিলিভারকে বয়কট করা দরকার।এই প্রশ্নের অনেক উত্তর দেওয়া সম্ভব। কিন্তু এতুটুকু বলেই ক্ষান্ত হবো যে, হ্যাঁ, এমনটা করা উচিৎ তবে মনে রাখবেন আমরা সব কিছুতে এতো দূরবর্তী হিসাব করলে দুনিয়াতে চলা অনেক মুশকিল হয়ে যাবে।( সেই মুশকিলগুলো নিয়ে আজ নয় আর আলোচনা নাই করলাম।) একটি জায়েয বড়জোর উত্তম কাজ নিয়ে নিজেকে এরকম কষ্টের মধ্যে ফেলানোকে আমার কাছে উচিৎ মনে হয় না।
তবে সর্বাবস্থায় দেশীয় পণ্য ব্যবহার করা দেশের জন্য ভালো এতে কোন সন্দেহে নাই। তাই আমরা ১০০% দেশীয় পণ্য ব্যবহার করব ইনশাআল্লাহ। আর ইউনিলিভারের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের শেয়ার আছে ৩৯.৬%। বাকিটা মূল কোম্পানির। তাই এর পণ্য দেশীয় পণ্য হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। ইসরাইলের হিসেবে বর্জন করা যেমন ভূল হবে তেমন অজ্ঞতাও হবে নিঃসন্দেহে।
তাই আসুন আমারা সব জায়গায় আবেগের ব্যবহার না করে বিবেক খাটিয়ে এমন কোম্পানিগুলোকেই বর্জন করি যাতে আমাদের নির্যাতিত ফিলিস্তিনি মুসলিম ভাইদের ফায়দা আছে। যেগুলো একটি একটি করে আমরা সামনে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সম্ভাব্য সকল পদ্ধতিতে ফিলিস্তিনের মুসলিমদের পাশে দাঁড়ানোর তাওফিক দান করুক। আমিন।
লেখকঃ মোহাম্মাদ মারুফ বিল্লাহ সাবেক
সাবেক শিক্ষার্থীঃ জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম ঢাকা( আকবর কমপ্লেক্স)
মারকাযুল বহূস আল ইসলামিয়া ঢাকা।মিরপুর-১ ঢাকা-১২১৬
মুহাদ্দিসঃ দারুল উলূম ফজলিয়া কওমিয়া মাদ্রাসা,পদ্মা সেতু ,শরিয়তপুর।
Write A Comment
নো কমেন্টস